Jump to content
IslamicTeachings.org

আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি


MUSLIM WOMAN

Recommended Posts

Asalamu'alaikum

 

 

 

মুলঃILoveAllaah.com|অনুবাদ:

ইমতিয়াজুল হক শুভ

| প্রকাশনায়ঃ

কুরআনের আলো ওয়েবসাইট

 

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

 

 

 

 

 

 

 

 

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد

 

 

আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকি

 

 

 

এটা রাশেদ নামক এক ব্যক্তির গল্প। সে তার গল্প বলল এ ভাবেঃ

 

 

আমার বয়স ত্রিশের বেশি হবে না যখন আমার স্ত্রী আমাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। আমি এখনো সে রাতের কথা ভাবি। সে রাতেও আমি পুরনো অভ্যাসের ন্যায় আমার বন্ধুদের সাথে অনেক রাত অবধি বাইরে ছিলাম। রাতটা ছিল অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় পরিপূর্ণ; তারচেয়েও বেশি পরচর্চা, খোশগল্প আর অন্য লোকদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশায় ভর্তি। আমি বেশিরভাগ সময়ই ছিলাম অন্যদের হাসানোতে পারদর্শী; অন্যদের নিয়ে উপহাস করতাম আর আমার বন্ধুরা কেবল হাসত আর হাসত। আমার মনে আছে সেই রাতে আমি তাদেরকে অনেক হাসিয়েছিলাম। অন্যদের নকল করার এক অদ্ভুত প্রতিভা ছিল আমার- আমি আমার কন্ঠস্বর নকল করতে পারতাম যতক্ষণ না অবধি যাকে আমি ঠাট্টা করছি হুবহু তার কন্ঠস্বরের মত হত। আমার বিধ্বংসী তামাশার হাত থেকে কেউ রেহাই পেত না; এমনকি আমার বন্ধুরাও না; কেউ কেউ আমার মুখের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাকে এড়িয়েও চলত। আমার মনে আছে সেই রাতে আমি এক অন্ধ ব্যক্তিকে নিয়ে উপহাস করছিলাম যাকে আমি মার্কেটে ভিক্ষা করতে দেখেছিলাম। সবচেয়ে বাজে যা করেছিলামতাছিল আমি আমার পা তার সামনে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- যাতে সে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় আর তারপর সে মাথা ঘুরিয়ে হতবিহ্বলের মত এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল।

 

 

 

আমি যথারীতি রাতে দেরি করে বাসায় ফিরলাম এবং আমার স্ত্রীকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখলাম। তার অবস্থা ছিল ভয়াবহ, কাঁপা-কাঁপা গলায় সে আমাকে জিজ্ঞেস করলঃ “রাশেদ....এত রাত অবধি কোথায় ছিলে?”

“কোথায় আর থাকব, মঙ্গল গ্রহে ছিলাম!” আমি ব্যঙ্গভরে বললাম, “অবশ্যই আমার বন্ধুদের সাথে ছিলাম।”

 

 

তাকে চরমভাবে পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল, আর অনেক কষ্টে সে চোখের পানি আটকে রেখেছিল। সে বলল, “রাশেদ, আমি প্রচন্ড ক্লান্ত। মনে হচ্ছে বাচ্চা জন্মানোর সময় এসে পড়েছে।” তার গাল বেয়ে এক চিলতে নির্বাক অশ্রু ঝরে পড়ল।

আমি অনুভব করলাম যে আমার স্ত্রীকে আমি অনেক অবহেলা করেছি। আমার উচিত ছিল তার যত্ন নেয়া আর এতগুলো রাত দেরি করে বাইরে না থাকা.....বিশেষ করে যখন সে নয় মাসের গর্ভবতী ছিল। আমি তড়িঘড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম; তাকে ডেলিভারি রুমে নিয়ে যাওয়া হল আর ঘন্টার পর ঘন্টা সে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পার করছিল।

আমি ধৈর্য্যের সাথে বাচ্চা জন্মাবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু তার ডেলিভারি ছিল অনেক জটিল আর আমি অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছিলাম এবং তারপরে আমি নিজেও ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তাই হাসপাতালে আমার ফোন নাম্বার রেখে বাসায় চলে গেলাম যাতে তারা আমাকে ভালো কোন খবর দিতে পারে। একঘন্টা পর তারা আমাকে ‘সালিম’ এর জন্মের সুসংবাদ দিয়ে অভিনন্দন জানাল। আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটে গেলাম। যখনই তারা আমাকে দেখল, তখনই আমাকে সেই ডাক্তারের সাথে দেখা করতে বলল যে আমার স্ত্রীর ডেলিভারির দায়িত্বে ছিল। “কিসের ডাক্তার?” আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,“আমি আমার সন্তান সালিমকে দেখতে চাই!”

তারা বললঃ “প্রথমে ডাক্তারের সাথে দেখা করুন”।

আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম, তিনি আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে লাগলেন এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ

“আপনার সন্তানের চোখে মারাত্মক রকমের বিকৃতি রয়েছে আর দেখে মনে হচ্ছে যে তার দৃষ্টিশক্তি নেই।” আমার মাথা নত হয়ে গেল যখন আমি কান্না আটকাবার জন্য যুদ্ধ করছিলাম...মার্কেটের সেই অন্ধ লোকটির কথা মনে পড়ল যাকে আমি ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিলাম অন্যদের হাসানোর জন্য।

সুবহানাল্লাহ! যেমন কর্ম তেমন ফল! আমি মনমরা হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম...কি বলব তা আমার জানা ছিল না। তারপর আমার স্ত্রী ও বাচ্চার কথা মনে হল। আমি ডাক্তারকে তার সহানুভূতিশীলতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমার স্ত্রীকে দেখতে গেলাম। আমার স্ত্রী দুঃখী ছিল না। সে আল্লাহর হুকুমের প্রতি আস্থাশীল ছিল... সে ছিল হৃষ্টচিত্ত...কতবারই না আমাকে সে নিষেধ করেছিল অন্যদের প্রতি তামাশা না করতে! “পরনিন্দা করো না,” সে সবসময় আমাকে বারংবার এ কথা বলত...আমরা হাসপাতাল ছাড়লাম আর সালিমকে আমাদের সাথে নিয়ে আসলাম।

বাস্তবে আমি ওর প্রতি খুব একটা মনযোগী ছিলাম না। আমি এমনভাব করতাম যেন সে আমাদের সাথে নেই। যখন সে চিৎকার করে কাঁদত, তখন আমি শোয়ার ঘরে পালিয়ে যেতাম সেখানে ঘুমানোর জন্য। আমার স্ত্রী তার বেশ ভালো দেখাশোনা করত আর ওকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু আমি নিজে ওকে ঘৃণাও করতাম না আবার ভালোবাসতেও পারতাম না।

 

 

 

সালেম বড় হতে লাগল। সে হামাগুড়ি দিতে শুরু করল, তার হামাগুড়ি দেয়ার ধরনটাও ছিল অদ্ভুত। যখন তার বয়স প্রায় এক বছরের কাছাকাছি, সে কথা বলা শুরু করল আর আমরা আবিষ্কার করলাম যে সে পঙ্গু। আমার কাছে মনে হল সে আমার ঘাড়ে আরো বেশি বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়াল। তার পরে আমার স্ত্রী উমার ও খালিদের জন্ম দিল। বছর কেটে যেতে লাগল আর সালিম এবং তার ভাইয়েরাও বড় হতে লাগল।ঘরে বসে থাকতে আমার কখনোই ভালো লাগত না, সবসময়ই আমি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বাইরে থাকতাম...আসলে আমি ছিলাম তাদের কাছে খেলনার মত(তাদের ইচ্ছেমাফিক তাদের আমোদিত করতাম)।

 

 

আমার স্ত্রী কখনোই আমার সংশোধনের পেছনে হাল ছাড়ত না। সে প্রতিনিয়ত আমার হেদায়াতের জন্য দু’আ করত। আমার বেয়াড়া স্বভাবের প্রতি সে কখনোই রাগান্বিত হত না, কিন্তু তার মনটা খুবই খারাপ হত যখন সে দেখত আমি সালিমকে বাদ দিয়ে তার অন্য ভাইদের প্রতি মনযোগ দিচ্ছি। সালিম বড় হতে লাগল আর সেই সাথে তাকে নিয়ে আমার চিন্তাও বেড়ে যেতে লাগল। আমার স্ত্রী তাকে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে আমাকে বললে আমি কিছু মনে করি নি।

বছর পার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি অনুভব করি নি। আমার দিনগুলো ছিল প্রায় একই রকম। কাজ, খাওয়া, ঘুম আর বন্ধুদের সাথে বাইরে আড্ডা মারা। এক শুক্রবারে, আমি সকাল ১১টার সময় ঘুম থেকে উঠলাম। আমার জন্য তা ছিল অনেক তাড়াতাড়ি। আমার দাওয়াত ছিল এক মজলিসে যাওয়ার, তাই আমি কাপড়-চোপড় পড়ে সুগন্ধী মাখলাম আর বেরিয়েযেতে উদ্যত হলাম। আমি শোবার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আর তখনই সালিমকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! এটা ছিল প্রথম বার যখন আমি সালিমকে তার শৈশবের পর কাঁদতে দেখেছি। দশ বছর কেটে গিয়েছে, আর আমি তার প্রতি মনযোগ দিই নি! আমি তখন তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না...আমি শুনতে পেলাম সে তার মাকে ডাকছে। আমি তার দিকে মুখ ঘুরালাম ও তার পাশে গেলাম।

 

 

 

জিজ্ঞেস করলামঃ “সালিম! তুমি কাঁদছ কেন?”

আমার গলা শুনে সে কান্না থামিয়ে দিল। তারপর যখন সে বুঝতে পারল আমি তার খুব কাছে, সে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে চারপাশে হাতড়াতে লাগল। তার সমস্যা কি? আমি আবিষ্কার করলাম যে সে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছিল! মনে হচ্ছিল সে যেন বলছে, “এখন তুমি আমাকে দেখছো! এই দশ বছর তুমি কোথায় ছিলে!” আমি তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম...সে তার রুমে চলে গেল। প্রথমে সে আমাকে তার কান্নার কারণ বলতে চাইছিল না। আমি তার সাথে শান্ত থাকার চেষ্টা করলাম...সে আমাকে তার কান্নার কারণ বলতে শুরু করল আর আমি তা শুনে কেঁপে উঠছিলাম।

আপনারা কি জানেন সেই কারণটা কি? তার ভাই উমার, যে কিনা তাকে মসজিদে নিয়ে যায়, দেরি করেছিল। আর যেহেতু, দিনটা ছিল জুমুআ’, সালিম প্রথম কাতারে জায়গা পাবে কিনা এই ভেবে ভয় পাচ্ছিল। সে উমারকে ডাকছিলো...তার মাকে ডাকছিলো...কিন্তু কেউই সাড়া দিচ্ছিল না, তাই সে কাঁদছিল। তার দৃষ্টিহীন চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুর দিকে আমি তাকিয়ে থাকলাম। তার বাকি কথাগুলো আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি আমার হাত তার মুখের ওপর বুলিয়ে বললামঃ “সালিম! তুমি কি এজন্যই কাঁদছিলে?”

সে বলল, “হ্যাঁ।”

আমি আমার বন্ধুদের কথা ভুলে গেলাম, ভুলে গেলাম আমার দাওয়াতের কথা আর তাকে বললামঃ “কেঁদো না সালিম। তুমি কি জানো তোমাকে আজ কে মসজিদে নিয়ে যাবে?”

 

 

 

“অবশ্যই উমার....কিন্তু সে সবসময় দেরি করে।”

আমি বললাম, “না, আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।”

সালিম হতবাক হয়ে গেলো...সে এটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। ভাবছিল আমি বুঝি তার সাথে ঠাট্টা করছিলাম। তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল আর সে আবারো কাঁদতে লাগল। আমি নিজ হাতে তার চোখের পানি মুছে দিলাম, তারপর তার হাত ধরলাম। আমি তাকে মসজিদে গাড়ীতে করে নিয়ে যেতে চাইলাম। সে না করল আর বলল, “মসজিদ কাছেই...আমি সেখানে হেঁটে যেতে চাই।” হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ, এ কথাই সে আমাকে বলল।

আমি মনে করতে পারছিলাম না যে শেষ কবে মসজিদে প্রবেশ করেছিলাম, কিন্তু সেবার প্রথমবারের মত আমি ভয় পাচ্ছিলাম ও অনুশোচনায় ভুগছিলাম এত বছর ধরে আমি কি অবহেলা করেছি ভেবে। মসজিদ মুসল্লীতে পরিপূর্ণ ছিল, তারপরেও আমি সালিমের জন্য প্রথম কাতারে একটা স্থান খুঁজে পেলাম। আমরা একসাথে জুমু’আর খুতবা শুনতে লাগলাম, এবং সে আমার পাশে সালাত আদায় করল। কিন্তু বাস্তবে, আমিই ওর পাশে সালাত আদায় করেছিলাম।

সালাতের পর সালিম আমাকে একটা কোরআন এনে দিতে বলল। আমি অবাক হয়ে গেলাম! সে তো অন্ধ ছিল, সে কিভাবে তা পড়বে? আমি তার অনুরোধ প্রায় ফেলে দিচ্ছিলাম, কিন্তু সে কষ্ট পাবে এই ভয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম তার অনুরোধকে সম্মান জানাব। আমি তাকে কোরআন দিলাম। সে আমাকে সূরা কাহফ খুলতে বলল। আমি সূচিপত্র দেখে পাতা উল্টাতে লাগলাম যতক্ষণ না সূরাটা পাই। সে কোরআনটা আমার কাছ থেকে নিলো, তার সামনে রাখল আর সূরাটা তিলাওয়াত করতে শুরু করল...চোখ বন্ধ করে...ও আল্লাহ! পুরো সূরাটাই তার মুখস্থ ছিল।

আমি নিজের কাছে লজ্জিত হয়ে গেলাম। আমি একটা কোরআন নিলাম...অনুভব করলাম আমার পেশিগুলো যেন কাঁপছে...আমি পড়তে থাকলাম তো পড়তেই থাকলাম। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলাম আমাকে মাফ করে দিতে ও সরল পথে পরিচালনা করতে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না...আমি শিশুর মত কাঁদতে শুরু করলাম। মসজিদে তখনো কিছু লোক সুন্নত সালাত আদায় করছিল... তাদের উপস্থিতিতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম, তাই আমি কান্না থামাতে চেষ্টা করলাম। আমার কান্না দীর্ঘ শ্বাসযুক্ত ফোঁপানোতে পরিণত হল। কেবলমাত্র অনুভব করলাম একজোড়া ছোট হাত আমার মুখের ওপর এসে পড়েছে, আর আমার অশ্রু মুছে দিচ্ছে। এটা ছিল সালিম! আমি তাকে বুকে টেনে নিলাম...তার দিকে তাকালাম। নিজেকে বললাম...তুমি(সালিম) অন্ধ নও, বরং অন্ধ তো আমি, কারণ আমি সেই সব দুষ্ট লোকদের দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম যারা আমাকে জাহান্নামের আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। আমার স্ত্রী সালিমকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা করছিল, কিন্তু তার দুশ্চিন্তা আনন্দময় অশ্রুতে পরিণত হয়ে গেলো যখন সে শুনল যে আমি সালিমের সাথে জুমু’আর সালাত পড়েছি।

 

 

 

সেই দিন থেকে আমার কখনো জামাতে সালাদ আদায় করা বাদ পড়ে নি। আমি আমার খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলাম...আর মসজিদে যেসব সৎ লোকদের সাথে পরিচয় হয়েছিল, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলাম। তাদের সাথে মিলে আমি ঈমানের মধুরতার স্বাদ আস্বাদন করলাম। তাদের কাছ থেকে শিখলাম কোন জিনিসগুলো দুনিয়া থেকে আমার মনযোগ সরাতে পারবে। আমি কখনোই হালাকা(যে মজলিসে আল্লাহর যিকির হয়) কিংবা বিতরের সালাত বাদ দিতাম না। একমাসের মধ্যেই আমি পুরো কোরআন বেশ কয়েকবার পড়ে ফেললাম। আল্লাহ্ আমার পরনিন্দা ও অন্যদের ব্যঙ্গ করার গোনাহ ক্ষমা করবেন, এই আশায় আমি আমার যবান আল্লাহর যিকিরে সিক্ত করলাম। আমি আমার পরিবারের নৈকট্য অনুভব করলাম। আমার স্ত্রীর চোখে আগে যে ভয় ও অনুকম্পা মিশ্রিত দৃষ্টি ছিল, তা দূর হয়ে গেল। সালিমের মুখ থেকে এখন আর এক চিলতে হাসি কখনোই অদৃশ্য হয় না। তাকে দেখলে মনে হতো যেন সে এই দুনিয়ার সব কিছুর মালিক। আমি আল্লাহকে তাঁর এই অফুরন্ত নিয়ামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ দিতে লাগলাম।

 

 

 

একদিন আমার সৎ বন্ধুরা মিলে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে দূরবর্তী এক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করল। তাদের সাথে যাওয়ার ব্যাপারে আমি ইতস্তত করছিলাম। আমি ইসতিখারার সালাত আদায় করলাম ও আমার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করলাম। ভেবেছিলাম সে হয়তো না করবে...কিন্তু এর উল্টোটাই ঘটল! সে খুবই খুশি হল এমনকি আমাকে উৎসাহিতও করল...কারণ অতীতে সে আমাকে দেখেছে ওর সাথে কোন আলোচনা না করেই খারাপ কারণে আমি অনেক জায়গা ঘুরে বেরিয়েছি। আমি সালিমের কাছে গিয়ে আমার ভ্রমণের ব্যাপারে বললাম। অশ্রুসজল নয়নে সে আমাকে তার ছোট্ট বাহুদ্বয় দ্বারা জড়িয়ে ধরল...

আমি সাড়ে তিন মাসের জন্য বাড়ীর বাইরে ছিলাম। সেই সময়ে, আমি সুযোগ পেলেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করতাম। আমি তাদেরকে প্রচন্ডভাবে মিস করতাম...আর হ্যাঁ, সালিমকে কিভাবে মিস করতাম। আমি তার গলার আওয়াজ শুনতে চাইতাম...যবেত্থেকে আমি সফরে বেরিয়েছিলাম, একমাত্র সেই আমার সাথে কথা বলেনি। আমি যখনই ফোন করতাম, তখনই হয় সে স্কুলে থাক নতুবা মসজিদে থাকত। যখনই আমি আমার স্ত্রীকে বলতাম সালিমকে আমি কত্ত মিস করি, তখনই সে অত্যন্ত তৃপ্তির হাসি হাসত, কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটল একবারই, যেবার আমি তাকে শেষ ফোন করেছিলাম। আমি তার আগের হাসি শুনতে পেলাম না। তার কন্ঠস্বর ছিলভিন্ন । আমি তাকে বলেছিলাম, “সালিমকে আমার সালাম জানিয়ো,” আর সে বলেছিল, “ইনশাল্লাহ্,” অতঃপর সে চুপ ছিল।

 

 

অবশেষে আমি ঘরে চলে আসলাম। আমি দরজার কড়া নাড়লাম। আমি আশা করছিলাম হয়তো সালিম দরজা খুলবে, কিন্তু দরজায় খালিদকে দেখে খুবই অবাক হলাম, তার বয়স চার বছরের বেশি ছিল না। আমি তাকে কোলে নেয়ার পর সে বাবা! বাবা! বলে তীক্ষ্ণ চিৎকার দিল। ঘরে ঢোকার পর আমার অন্তরে কেন জানি চাপা একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

আমি আল্লাহর নিকট অভিশাপগ্রস্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইলাম...স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গেলাম...তার চেহারা ছিল অন্যরকম। যেন মনে হচ্ছিল সে খুশী হবার ভান করছে। আমি তাকে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম আর জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার কি হয়েছে?” সে বলল, “কই, কিছু হয়নি তো।” হঠাৎ করে আমার সালিমের কথা মনে পড়ল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম “সালিম কোথায়?” সে মাথা নিচু করে ফেলল। কোনো জবাব দিল না। তার গাল বেয়ে উষ্ণ অশ্রু নেমে এল।

 

 

“সালিম! কোথায় আমার সালিম?” আমি চিৎকার করে শুধালাম।

ঠিক সেই মূহুর্তে আমি খালিদকে তার নিজের ভাষায় বলতে শুনলাম, “বাবা...থালিম আল্লাহর কাছে জান্নাতে চলে গেছে...”

আমার স্ত্রী আর সহ্য করতে পারছিল না। সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সে প্রায় মেঝেতে পড়ে যাচ্ছিল, এবং রুম থেকে বেরিয়ে গেল। পরে আমি জানতে পারলাম যে আমার আসার দুসপ্তাহ আগে সালিম জ্বরাক্রান্ত হয়েছিল, তাই আমার স্ত্রী তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল...জ্বর আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল ও সালিম সেরে উঠছিল না...যতক্ষণ না তার আত্মা দেহত্যাগ করেছিল।

এই দুনিয়া যদি তার বিশালতা সত্ত্বেও তোমার সামনে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, আর তোমার আত্মা যদি তার ভার সইতে না পেরে তোমাকে ছেড়ে যেতে উদ্যত হয়, তখন বলে ওঠোঃ “ও আল্লাহ্।” যদি সমাধান না থাকে, পথগুলো খুব বন্ধুর হয়ে পড়ে এবং রজ্জুগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর তোমার আশা নিঃশেষ হয়ে যায়, তখন ডাক দাওঃ “ও আল্লাহ।”

আল্লাহ্ সালিমের মৃত্যুর পূর্বে তার মাধ্যমে তার পিতাকে সঠিক পথে আনতে ইচ্ছা করেছিলেন। কত করুণাময়ই না আল্লাহ্!

“অনেক বড় কাজও নিয়্যাতের কারণে ক্ষুদ্র হয়ে যায় আবার অনেক ক্ষুদ্র কাজও বড় হয়ে যায় কেবলমাত্র নিয়্যাতেরই কারণে.....।
(আব্দুল্লাহ্ ইবনে মোবারক)

Link to comment
Share on other sites

Create an account or sign in to comment

You need to be a member in order to leave a comment

Create an account

Sign up for a new account in our community. It's easy!

Register a new account

Sign in

Already have an account? Sign in here.

Sign In Now
×
×
  • Create New...