Jump to content
IslamicTeachings.org

রাতে দেরীতে ঘুমানো - আধুনিক সময়ের এক অভিশাপ :


MUSLIM WOMAN

Recommended Posts

Asalamu'alaikum

 

 

রাতে দেরীতে ঘুমানো - আধুনিক সময়ের এক অভিশাপ :

 

আল্লাহ রাত কেন সৃষ্টি করেছেন ?

তিনিই তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছেন আবরণস্বরূপ , বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন নিদ্রা ও কাজের জন্য দিয়েছেন দিন ( সুরাহ ফুরকান ; ২৫ : ৪৭) ।

 

 

আগেকার যুগের বিশ্বাসীরা কিভাবে তাদের রাত কাটাতেন ?

 

 

 

বেহেশত লাভের উপায় হিসাবে বিশ্বাসীরা রাতের সময়কে কাজে লাগাতেন । বেঁচে থাকতে যারা বেহেশত লাভের সুখবর পেয়েছিলেন , সেই শেষ নবী ও তার অনেক সাহাবী রাত কাটাতেন ইবাদতে ।

 

 

 

হজরত মুহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাতের পর কথা বলতে বা গভীর রাত পর্যন্ত অযথা জেগে থাকতে অপছন্দ করতেন । তবে দ্বীনি শিক্ষা দিতে তিনি কখনো কখনো রাত জাগতেন ও মুসলমানদের জন্য যা কল্যাণকর , সে সম্পর্কে পরামর্শ করার জন্য অনেক সময় রাতে আবু বকর রাযি আল্লাহু আনহুর বাসায় যেতেন ।

 

 

 

 

দিনের ব্যস্ততায় নফল সালাত আদায় করা বা কুরআন তেলাওয়াত করা অনেকের পক্ষে কঠিন ছিল । তারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে কুরআন পড়তেন আর সিজদায় গিয়ে গুনাহ পাপের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেন । হজরত মুহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে দিনে – রাতে কমপক্ষে সত্তরবার মাফ চাইতেন , নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন । মা আয়শা রাযি আল্লাহু আনহা একদিন বললেন , আল্লাহ তো আপনাকে মাফ করে দিয়েছেন । তাহলে কেন আপনি এত কষ্ট করে এভাবে ইবাদত করেন ? জবাবে রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না ?

 

 

 

 

আমরা কিভাবে রাতের সময়কে কাজে লাগাই ?

 

আমরা আজকের এই হতভাগা মুসলমানরা রাতকে কাজে লাগাই অনর্থক হাসিতামাশায় কাটানোর জন্য - অনেক সময় তা হয় হারাম ফূর্তির জন্য , আসতাগফিরুল্লাহ ।

 

 

 

 

 

গ্রীস্মের ছুটিতে পশ্চিমা তরুণ সমাজ :

 

রাতে সবাই যখন ঘুমে , তারা তখন বন্ধুদের সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে । কখনো তারা দল বেঁধে ডিসকো পার্টিতে যাচ্ছে মদ ও মাদক খেতে আর উন্মাদের মত হাত পা ছুঁড়ে নাচতে । যারা বাইরে যায় নি বা যাওয়ার সুযোগ পায় নি , তারা ঘরে বসে ইন্টানেটে সারা দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে । চ্যাট রুমে অনলাইনে ছেলে ও মেয়ে বন্ধুদের কেউ এশিয়ার , কেউ আমেরিকা বা ইউরোপের - একেক জন একেক দেশের । এদের সাথে একসাথে আড্ডা দেয়া ‘ দারুণ ‘ ব্যপার । এটা করার জন্য রাত হচ্ছে উপযুক্ত সময় , দিনের বেলার আড্ডা মোটেও জমে না ।

 

কেউ খাওয়া – ঘুম ফেলে সর্বশেষ গেম খেলায় মগ্ন যেন বন্ধুদের থেকে বেশী স্কোর করতে না পারলে জীবন ব্যর্থ । কেউ বা সাম্প্রতিক সিনেমা ডাউনলোড করে তা দেখছে যেন এখনই দেখতে না পারলে সবাইকে আর মুখ দেখানো যাবে না । হ্যাঁ , এই হচ্ছে পশ্চিমে মুসলমান তরুণ সমাজের ভয়াবহ চিত্র ।

গ্রীস্মের ছুটিতে পাশ্চাত্যের তরুণরা এভাবে উচ্ছৃঙ্খল সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে । তারা মনে করছে এটাই আধুনিকতা । এমনটি না করলে বন্ধুরা তাকে খ্যাত বলবে ।

পশ্চিমা তরুণ – তরুণীদের জীবনের খারাপ এই দিক অনুকরণে আমাদের তরুণ সমাজের এক অংশ খুবই উৎসাহী । এর ফল হলো সকালে দেরীতে ঘুম থেকে উঠা । মুসলমান সমাজের এক বড় অংশই দিন শুরু করে ফজরের সালাত বাদ দিয়ে , আসতাগফিরুল্লাহ ।

 

 

 

মুসলমান অভিভাবকরা এখন লাশের ভূমিকায় :

 

 

 

 

 

লাশের কথা বলার ক্ষমতা নেই , কাউকে সে দিক – নির্দেশনা দিতে পারে না । অভিভাবকদের বেশীরভাগ না হোক , অনেকেরই অবস্থা এখন এই লাশের মতো । তারা সন্তানদের ইসলামী কোন শিক্ষা দেন না । সন্তান পড়ালেখা , নাচ – গান , অভিনয় , খেলাতে ভাল করলেই তারা সন্ত্তষ্ট । সবাইকে গর্ব করে তারা তা বলেন । কিন্ত্ত সন্তান যে সালাত আদায় করে না - এমন কি অনেকে জানেও না কিভাবে সঠিকভাবে সালাত পড়তে হয় বা কুরআন তেলাওয়াত করতে হয় , পরীক্ষা বা শরীর খারাপ হয়ে যাবে - এসব অজুহাতে সাবালক সন্তান রোজা রাখে না – এসব নিয়ে অভিভাবকরা মোটেও চিন্তিত নন ।

 

 

 

 

দু:খজনক হলেও সত্য যে উচ্ছৃঙ্খল সন্তানকে শাসন করা তো দূরের কথা , অভিভাবকরা নিজেরাও পশ্চিমা জগতের এই ফ্যাশনে আক্রান্ত । তারা নিজেরা বিভিন্ন পার্টিতে যাচ্ছেন ও গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে থাকছেন , ঘরে থাকলে টিভিতে হিন্দী নাটক বা ইংরেজী সিনেমা দেখে রাত দেড়টা - দুইটা সময় ঘুমাতে যান । মা – বাবা আচরণ যদি নাস্তিকদের মতো হয় , তাহলে কিভাবে আশা করা যায় সন্তান ইসলামিক আচার – আচরণ শিখবে ? মা – বাবা বড়জোর বলেন , এত রাত জেগো না , শরীর খারাপ করবে । কিন্ত্ত রাত জেগো না , ফজরের সালাতের জন্য উঠতে পারবে না – এমন কথা অভিভাবকরা কি বলেন ?

 

রাত জাগা ও হাসি – তামাশায় সময় কাটানো নিয়ে ইসলাম কী বলে ?

 

রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , দুইটি বিষয় থেকে অনেক মানুষ কল্যাণ গ্রহণ করে না । এগুলি হলো স্বাস্থ্য ও অবসর সময় । ইসলামিক চিন্তাবিদরা বলেন , অনেক মানুষই এই দুইটি কল্যাণের গূরুত্ব সম্পর্কে জানে না । কিয়ামতের দিনে উপকারে আসবে এসব কাজ তারা এই দুইটি বরকতের মাধ্যমে করে না ; তারা এ নিয়ে আফসোস করবে যখন আর এসব ফিরে পাওয়া যাবে না । তাই কোন কোন ছুটির দিন , শীত বা গ্রীস্মের বন্ধ শুধু খেলতামাশায় নষ্ট করা ঠিক না ।

মানুষের অনর্থক গল্পগুজবের মধ্যে থাকে পরনিন্দা , চোখলগুরি বা অনৈতিক কথাবার্তা , এসব ইসলামে নিষিদ্ধ । মোবাইল কোম্পানীগুলি ফ্রি টক টাইম বা নাম মাত্র মূল্যে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলার সুযোগ দিয়ে তরুণ – তরুণীদের উস্কে দিচ্ছে রাত জাগতে ও অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে । এভাবে হারাম কাজে সময় ও টাকা নষ্ট করা এবং স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়াকে ইসলাম সমর্থন করে না । এভাবে সময় নষ্ট করা এমন এক ক্ষতি যা পূরণ করা সম্ভব না ।কিছু সময় দুনিয়াদারীর জন্য রেখে অন্য সময় ইবাদত করতে হবে ও আল্লাহকে খুশী করার জন্য কাজ করতে হবে যেন কিয়ামতের দিনে সব কাজ বিফলে না যায় ।

 

রাত জাগা থেকে যা যা ক্ষতি হতে পারে :

 

১, ফজরের সালাত কাজা হয়ে যাবে । রাতে দেড়টা – দুইটা পর্যন্ত জেগে অনেকেই পরদিন বেলা বারেটার পরে ঘুম থেকে উঠে , আফসোস ।

 

রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , বিশ্বাসী ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত (মুসলিম ) ।

 

২. যদি ধরে নেই রাত জাগার পরেও ফজরের সময় কেউ উঠতে পারবে , তবু একটা আশংকা থাকে যে ঘুম ঘুম চোখে সালাতে মন দেয়া তার পক্ষে কষ্টকর হবে । এমন কি , সালাতে কী বলছে , সেটা সে হয়তো ঠিকমতো খেয়াল করতে পারবে না ।

৩ . নিয়মিতভাবে রাত জেগে টিভি দেখা , অনলাইনে চ্যাট করা বা মোবাইলে গল্পে গল্পে রাত কাটানোর অভ্যাস করে ফেলা শরীরের জন্য ক্ষতিকর । কেননা , ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য সকালে কলেজ বা অফিস যাওয়ার জন্য বা বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘুম পুরো হওয়ার আগেই বিছানা ছাড়তে হয় । ফলে দূর্বল ও ক্লান্ত লাগা , সব কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা , ঘুমের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে । রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা ক্লান্তিকর ও বোঝাস্বরূপ ( দারিমী , তাবারানী ও অন্যান্য ) ।

৪ . রাত জাগা অভ্যাসের ফলে শরীর ক্লান্ত ও মেজাজ খারাপ হওয়াতে অনেক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে উঠে না । ফলে ব্যক্তি জীবনে ও সংসারে নানা অশান্তি দেখা দেয় । মেজাজ খারাপ থেকে অল্পতেই অন্যের সাথে ঝগড়া লেগে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যা ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে । এছাড়া শারীরিক দূর্বলতার কারণে কাজে ফাঁকি দেয়ার বদঅভ্যাস গড়ে উঠবে ।

৫ . ভোর রাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশী কল্যাণ থাকে । রাসূল বলেছেন , আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করা হয়েছে ।

এজন্য রাসূল কোন যুদ্ধ অভিযানে সেনাবাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন । দেরীতে ঘুমানো ও দেরীতে উঠে আমরা সকালের কল্যাণ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করছি , কি দূর্ভাগ্য আমাদের ।

 

 

৬. রাত জেগে যারা দলবেঁধে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় , তারা নানা সামাজিক সমস্যার সৃস্টি করে । এর একটি হলো পার্টি থেকে মদ খেয়ে বাড়ি ফেরার সময় মাতাল ড্রাইভাররা দূর্ঘটনা ঘটিয়ে নিজের ও অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ।

 

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার উপকারিতা :

আমরা যদি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাই , তাহলে কিয়াম আল লাইল বা তাহাজ্জুদ ও জামাতে ফজরের সালাত আদায়ের জন্য শেষ রাতে উঠতে পারবো । এই সময়টা দুআ করা ও আল্লাহর কাছে তওবা করার জন্য খুব ভাল সময় , কেননা আল্লাহ বেহেশবাসীদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেন , তারা শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করতো (সূরাহ যারিয়াত ; ৫১ :১৮) । রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সুসংবাদ দিয়ে গিয়েছেন যে , শেষ রাতে ইবাদতের জন্য যে স্বামী বা স্ত্রী অন্যজনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয় ও সে ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে চোখে মুখে পানির ছিটা দেয় , আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন ( আবু দাউদ ) ।

হে মুসলমান , দয়া করে ভেবে দেখুন , বিছানায় পড়ে থেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এই অমূল্য বরকতময় সময় নষ্ট করা কি উচিত ?

 

ব্যতিক্রম :

 

 

 

রাসূল বলেছেন , রাত জাগা তিন ধরণের মানুষের জন্য । মুসাফির , সালাত আদায়কারী ও বিয়ের রাতে নবদম্পতি ।

 

 

শেষ রাতে কিভাবে ঘুম থেকে উঠা সম্ভব ?

 

শেষ রাতে চারপাশের সবাই যখন গভীর ঘুমে , তখন বিছানা থেকে উঠে ইবাদত করা খুবই কষ্টকর । ক্লান্তিতে এই সময় দুই চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যায় । এ্যলার্ম দিয়েও ঘুম তাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে ।

শেষ রাতে ইবাদত করার সৌভাগ্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে ও দিনের বেলা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে হবে । বিশেষ করে , দুপুরের সালাতের আগে বা পরে কিছু সময় ঘুমিয়ে নিলে ক্লান্তি দূর হয় ; পরিশ্রম করার শক্তি পাওয়া যায় । ফলে শেষ রাতে বা ফজরের আগে আগে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর সামনে হাজিরা দেয়া সহজ হয় ।

 

 

রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দিয়েছেন , তোমরা দুপুরে কিছু সময়ের জন্য ঘুমাও ( বিশ্রাম নাও ) । কেননা এ সময় শয়তান বিশ্রাম নেয় না ( তাবারানী ) ।

 

আসুন , আমরা আধুনিকতার অভিশাপ রাতে দেরীতে ঘুমাতে যাওয়ার বদঅভ্যাস থেকে নিজেদের মুক্ত করি , আল্লাহ তওফীক দিন ।

সহায়ক সূত্র : Staying up Late ... A Disease of Modern Times: by Asma bint Shameem ; http://www.islamweb.net , www.quraneralo.com

Link to comment
Share on other sites

Create an account or sign in to comment

You need to be a member in order to leave a comment

Create an account

Sign up for a new account in our community. It's easy!

Register a new account

Sign in

Already have an account? Sign in here.

Sign In Now
×
×
  • Create New...